মুঘল যুগে আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক ব্যবস্থা ছিল না, তবে এযুগে ব্যাংক ও ব্যাংকার ছিলেন। সমকালীন নথিপথে ব্যাংকারদের কথা বহুবার উল্লেখিত হয়েছে। ব্যাংকিং ছিল ব্যক্তিগত ও পারিবারিক। জনৈক স্রোপদের কথা উল্লেখ কর হয়, মুঘল যুগের গ্রামেও এদের সাক্ষাৎ পাওয়া যেত। শহর ও গ্রামের সর্বত্র স্রফরা ছিল। যদিও অধ্যাপক গৌতম ভদ্র দেখিয়েছেন যে, বহু বর্ণের মানুষ এই ব্যাংকিং কারবারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। রাজস্থানের বহু জায়গায় ব্রাহ্মণরা ব্যাংকিং কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। অষ্টাদশ শতকে বাংলাদেশের সোনারবেনে থেকে ব্রাহ্মণ সকল বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যাংকিং কারবার চালাতো।
মুঘল যুগে অর্থনৈতিক কাজকর্ম বেড়েছিল অনাবাদি জমি চাষের আত্মতায় এসেছিল। শিল্প উৎপাদন বেড়েছিল অন্তর বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্য বিকাশ লাভ করেছিল। অর্থনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ব্যাংকিং ও ঋণ সরবরাহের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। মুঘল সম্রাটরা উন্নতমানের সোনা, রুপা ও তামার মুদ্রা চালু করেছিলেন সারাদেশে হুন্ডি ব্যবস্থা চলন ছিল, এর ফলে অর্থনীতিতে মূলধনের সরবরাহ বেড়েছিল। বিদেশিদের বিবরণী ফ্যাক্টরির রেকর্ড ও সাময়িক ফারসি আকার থেকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বহু তথ্য পাওয়া যায়।
তা ভার নেওয়ায় জানিয়েছেন যে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে বিনিময়, হুন্ডি, বাণিজ্য, বীমা ইত্যাদির চলন ছিল। শিল্প বাণিজ্য ও কৃষির চাহিদার বেশিরভাগ মেটাতো দেশের হাজার হাজার বনিয়া, মহাজন, অফ, সাহুকর ও শেঠরা। দেশি বনিক ইউরোপীয় বণিক এবং রাষ্ট্র দূরবর্তী স্থানে নগদ টাকা পাঠাতে হলে ব্যাংকিং পরিবারের সাহায্য নিত। যেমন বাংলার নবাবরা জগৎশেঠদের কুঠির মাধ্যমে হুন্ডি করে সম্রাটের প্রাপ্য রাজস্ব পাঠাতেন। আধুনিক কালের বিল অব এক্সচেঞ্জের মতো এক ধরনের ব্যবস্থা মোগল যুগে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল।
মুঘল যুগে ভূমি রাজস্ব নগদে ও উৎপন্ন পণ্যে আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। মোগল প্রশাসন নগদে রাজস্ব আদায়কে অধিকার দিয়েছিল। গ্রামাঞ্চলে ছিল ধান চালের কারবার। বাণিজ্য শস্য উৎপাদনে এবং কৃষির পণ্যের বাণিজ্য মূলধনের চাহিদা সৃষ্টি করেছিল। অর্থনীতিতে ব্যাংকার মহাজনদের প্রভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুধু দরিদ্র কৃষক নয় গ্রামীণ সমাজের সম্পদশালী মানুষরাও মহাজনদের কাছে ঋণ নিত।
মুসলিম শাস্ত্রে ও পবিত্র কোরআনের সুদের ব্যবসাকে নিন্দা করা হয়েছে। সুদের কারবার মহাপাপ এর কাজ। কিন্তু মোগল সম্রাটরা তাদের ব্যাংকার মহাজনদের সযত্নে রক্ষা করে চালিয়েছিলেন। রাজপুরুষরা ঋনের জন্য এদের ওপর নির্ভর করত এজন্য এদের কিছুটা রাজনৈতিক প্রভাবও ছিল।
মোগল যুগে ব্যাংকিং কারবার খুব সংগঠিত ছিল না। নিয়মমতিশীল শিথিল আঞ্চলিক ঐতিহ্য অনুযায়ী ব্যাংকিং কারবার চলত। বাণিজ্যিক ঋণের ক্ষেত্রে প্রতারণা ও সততার ঘটনা ঘটতো, তবে সাধারণভাবে ব্যাংকিং কারবার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছিল। হুন্ডিকে সকলে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করত হুন্ডি প্রাপকের অর্থ পেতে কোন অসুবিধা হতো না।
মুঘল যুগে দেশে মূলধনের অভাব ছিল না, বিশাল কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের মূলধনের চাহিদা মেটাতো দেশের ব্যাংকাররা। বাণিজ্য বীমা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, এতে বণিকদের বাণিজ্যের ঝুঁকি অনেকখানি কমে যেত। আর এভাবে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপস্থিতির ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। যা অর্থনীতির সমৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ফেলেছিল।
............ সমাপ্তি...........
✍️লেখিকা পরিচিতি
📖তথ্যসূত্র
- Poonam Dalal Dahiya, "Ancient and Medieval India".
- Upinder Singh, "A History of Ancient and Early Medieval India: From the Stone Age to the 12th Century".
📖সম্পর্কিত বিষয়
- আলাউদ্দিন খলজির অর্থনৈতিক সংস্কার (আরো পড়ুন)।
- দিল্লির সুলতানি রাষ্ট্রকে কি ধর্মাশ্রয়ী রাষ্ট্র বলা যায় (আরো পড়ুন)।
- মুঘল আমলে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা (আরো পড়ুন)।
- মুঘল আমলে সেচ ব্যবস্থা (আরো পড়ুন)।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আমাদের এই পোস্টটি আপনার ভালো লাগলো। আপনার যদি এই পোস্টটি সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারেন এবং অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে অপরকে জানতে সাহায্য করুন।
------------🙏---------------